গত পয়লা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) চল্লিশ পেরিয়ে একচল্লিশে পা দিয়েছে। বৃহৎ এ রাজনৈতিক দলকে এবার একেবারেই ভিন্ন পরিবেশে ও প্রেক্ষাপটে দিনটি পালন করছে। দলের চেয়ারপারসন রাজনীতির কাণ্ডারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে বন্দী রেখে চরম বৈরী পরিস্থিতিতে দিনটি উদযাপন করছে।
বেগম জিয়া কারাগারে রয়েছেন প্রায় সাত মাস। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। ওই মামলায় জামিন হলেও পরে আরও ছয়টি মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকায় তার মুক্তি মেলেনি। সবমিলিয়ে খালেদা জিয়া তার বিরুদ্ধে ৩৬ মামলার মধ্যে ৩৪টিতে জামিন পেলেও আটকে আছেন ওই দুই মামলায়। তার আইনজীবীদের আশাবাদ, খুব শিগগির ওই দুই মামলায়ও জামিন পেয়ে মুক্ত হবেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন গত শনিবার বিএনপি আয়োজিত জনসভায় সেই আশাবাদের কথাই ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য অনেক দূর এগিয়েছি। সরকার যদি ‘হস্তক্ষেপ’ না করে তাহলে শিগগির তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন।
বিএনপি নেতাদের এ আশাবাদে যেন আরেকটু আলো দেখান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি সেদিনই রাতে দলের ধানমন্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার ব্যাপারে সরকার বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি আদালত থেকে জামিন পেলেই মুক্তি পাবেন।
এদিকে, খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জানায়, কুমিল্লার দু’টি মামলায় জামিন হলেই ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) মুক্তি পাবেন।
এটা কতোদিনের মধ্যে হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা সঠিক বলতে পারবো না। ওই দু’টি মামলার একটির শুনানির তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ও অপরটির ৫ সেপ্টেম্বর। একটিতে জামিন না হলে সরাসরি হাইকোর্টে জামিন চাওয়া হবে, অপরটি জজ কোর্ট হয়ে হাইকোর্টে আসবে।
সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, একটি মামলায় হাইকোর্ট এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ দিলেও কুমিল্লার আদালত তা করেননি বলেই সময় বেশি লাগছে।
দলের অন্য নেতারা বলছেন, সরকার যদি হস্তক্ষেপ না করে তাহলে এ মাসের (সেপ্টেম্বর) মধ্যেই খালেদা জিয়া জামিনে মুক্ত হয়ে ফিরবেন নেতাকর্মীদের মাঝে।
প্রসঙ্গত, কারাগারে যাওয়ার পর মানহানির অভিযোগে ঢাকায় দু’টি, নড়াইলে একটি, কুমিল্লায় তিনটি মিলিয়ে মোট ছয়টি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এসব মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করা হয়। ভুয়া জন্মদিন উদযাপন ও রাষ্ট্রদ্রোহসহ বিভিন্ন অভিযোগের এসব মামলায় খালেদা জিয়া সংশ্লিষ্ট আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর হয়। পরবর্তীতে জামিন পেতে তিনি হাইকোর্টে আবেদন করেন। এ প্রক্রিয়ায় কুমিল্লার দু’টি ছাড়া বাকি চারটি মামলায় জামিন মঞ্জুর হয় খালেদার।
এর পাশাপাশি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া। আর অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ৩ অক্টোবর পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন হাইকোর্ট। এ মামলায় খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তিতে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।